নতুন চমক আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স জেনে নেই দাম এবং ফিচার জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অ্যাপল অবশেষে লঞ্চ করেছে তাদের আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স। অন্যান্য বছরের মতোই অ্যাপল তার “ফার আউট” বিশেষ ইভেন্টের জন্য ৭ সেপ্টেম্বর কে বেছে নিয়েছে। যা কিনা আমাদের প্রত্যাশিত iPhone 14 প্রজন্মের এর দিকেই বেশী নজর দিয়েছে।
এই সিরিজের চারটি দুর্দান্ত স্মার্টফোন এর মাঝে আগের ভার্সনের তুলনায় এই ফোনে নতুন কিছু আকর্ষণীয় ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। তরুন প্রজন্মের গ্রাহকদের জন্য এর ডিজাইনে বিশেষ ভ্যারিয়েন্টও নিয়ে আসা হয়েছে। আমাদের আজকের এই পোষ্ট এর মাধ্যমে আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এর ফিচার ও দাম সংক্রান্ত সব তথ্য জেনে নেই।
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এর দারুন কিছু ফিচার-
- আকর্ষণীয় ডিজাইন
- Always-on XDR ডিসপ্লে
- ডায়নামিক আইসলেন্ড নোটিফিকেশন
- A16 প্রসেসর
- লং-লাস্টিং ব্যাটারি পারফর্মেন্স
- ক্যামেরা
- ইমারজেন্সি স্যাটেলাইট সংযোগ
- দাম ও অন্যান্য
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স আকর্ষণীয় ডিজাইন
আইফোনের ডিজাইন আপগ্রেড এর পর বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে, তাই গ্রাহকরা নতুন করে ডিজাইন আশা করাটাই স্বাভাবিক। আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এর ফ্রন্ট ডিজাইনে পিল শেপ নচ ব্যবহারের মাধ্যমে বেশ ভিন্নতা নিয়ে আসা হয়েছে।
ডিভাইসের স্ক্রিনের পিছনে নতুন সেন্সরের উপস্তিতির কারনে দেখলে মনে হয় আরো ভালো মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতার প্রদান করা হয়েছে। এর খাঁজও যথেষ্ট সংকীর্ণ করার ফলে এটি বড় স্ক্রিনের সাহায্যে এককভাবে ব্যবহারে সহায়তা করে। ১৬০.৬মি.মি. উচ্চতার এই ফোনের ঘনত্ব এও যথেষ্ট পরিবর্তন আনা হয়েছে। রিয়ার প্যানেল ডিজাইন যদিও একি থাকছে সেই সাথে হাই-এন্ড সেন্সর ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সিস্টেমও থাকছে।
ভলিউম কন্ট্রোল, সাইলেন্স স্লাইডার এবং পাওয়ার/স্লিপ/শিরি বোতামগুলি কিছুটা ছোট কিন্তু সবগুলি এখনও আগের অবস্থানেই রয়েছে। অ্যাপল তাদের কোনো পরিবর্তন করেনি।
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স আকর্ষণীয় চারটি রঙের সমন্বয়ে পাওয়া যাবে।
- যার মধ্যে: স্পেস ব্লাক,
- রুপালী
- সোনালী এবং গাড় বেগুনী রঙের। নীচের দিকে একটি লাইটিং কেবল পোর্ট এবং ফায়ারিং লাউড স্পিকার রয়েছে। এটি IP68 জল প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন, পিছনে সিরামিক শিল্ড এবং পাশে স্টেইনলেস স্টিলের মাধ্যমে আরো শক্তিশালী করে তোলা হয়েছে।

ডিসপ্লে
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এর স্ক্রিন রেজোলিউশন খুব বেশি উন্নত করা হয়নি। ২৭৯৬ x ১২৯০, এতে অন্যান্য মডেলের তুলনায় মাত্র কয়েকটি অতিরিক্ত পিক্সেল রয়েছে। তবে অ্যাপল ডিসপ্লের একটি আইকনিক কম্পোনেন্ট নতুন করে যুক্ত করেছে।
সুপার রেটিনা এক্সডিআর ওএলইডি ডায়নামিক আইল্যান্ড নামে একটি একেবারে নতুন উপাদানকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে। মনে হয় যেন ফিজিক্যাল স্ক্রীন প্রসারিত হচ্ছে এবং ইচ্ছামত সংকুচিত হচ্ছে। যার ফলে আইফোন ডিসপ্লেতে জীবন্ত কিছু আছে বলে মনে হয়।
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স অন্যান্য ভার্সনের তুলনায় এইবার বেশ কিছুটা বড় ৬.৭ইঞ্চির ডিসপ্লে যুক্ত করেছে। যা কিনা ডলবি ভিসন সাপোর্ট এবং Always-on ডিসপ্লে, প্রমোশন 120Hz রিফ্রেশ রেইটসহ চালু করেছে। যদিও ফিচারটি অন্যান্য আরো কয়েকটি ফোনে বেশ কয়েক বছর থেকে চালু আছে।
ডায়নামিক আইসলেন্ড নোটিফিকেশন
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এর সবথেকে বড় ভিজ্যুয়াল পরিবর্তন করা হয়েছে ফেইস আইডি গেজেট এর মাধ্যমে। আর মূলত এটিকেই ‘ডায়নামিক আইসলেন্ড’ নামে পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। ফোনের খাঁজকে পিল-শেইপড কাট আউট দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর চারপাশে সম্পুর্ন ইকোসিস্টেম ডিজাইন করা। ফোনে কোনও অ্যালার্ট আসলে সেটি আপনাকে জানানোর জন্য এটি প্রসারিত হবে।
এই ফিচারের মাধ্যমে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। ফেস আইডি স্ক্যান করার সময়, এটি প্রসারিত হয় এবং একটি মুখের অ্যানিমেশন দেখায়। অ্যাপল মিউজিক বাজানোর সময়, এটি একটি মিউজিক বারে পরিণত হয়। একটি টাইমার ব্যবহার করার সময়, এটি টাইমার এর নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ডায়নামিক আইসল্যান্ডকে সাপোর্ট করে এমন অ্যাপ সোয়াইপ করলে এটি তার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। এমনকি এর মাধ্যমে একাধিক অ্যাপ একিসাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারে। আর এই বিশেষ ফিচারটি প্রথমবারের মতো আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এ যুক্ত করা হয়েছে।
আইফোন প্রো ম্যাক্স প্রসেসর
লেটেস্ট A16 বায়োনিক চিপসেট খুব সুক্ষভাবে আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এ পেশ করা হয়েছে। 4nm ম্যানুফ্যাকচারিং প্রসেস এবং 16 বিলিয়ন ট্রানজিস্টর ব্যবহারে নির্মিত হয়েছে। 6 কোর CPU এর মধ্যে দুইটি হাই পারফর্মেন্স কোর সেটাপ করা হয়েছে, যার ফলে ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম ব্যবহৃত হবে।
এটি স্ন্যাপড্রাগনের সর্বশেষ 8 Gen 1 এবং এর আগের A15 Bionic থেকে অনেকটাই উচ্চমানের। চিপসেট সমস্ত দৈনন্দিন কাজ এবং তার উপরে পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। এই মুহূর্তে এর থেকে ভালো পারফর্ম করতে পারে এমন কোনো মোবাইল চিপসেট খুব কমই আছে।
ব্যাটারি পারফর্মেন্স
iPhone 14 Pro Max একটি 4323 mAh ব্যাটারি দিয়ে সজ্জিত, ফোনের ব্যাটারি লাইফ একদিনের বেশি সময় ধরে চলার জন্য যথেষ্ট। যদিও সর্বদা অন-ডিসপ্লে এবং iOS 16 বাস্তবায়নের ফলে যতটা টেকসই হওয়া উচিত ততটা নাও হতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে।
আপাতদৃষ্টিতে দীর্ঘ সময় ধরে থাকার জন্য সমস্ত সঠিক নির্দেশনা ব্যবহার হয়েছে, দক্ষ নতুন ডিসপ্লে এবং নতুন দ্রুত চিপসেট সহ, এটি অবশ্যই ভালো পারফর্মেন্স এর ইঙ্গিত দেয়।
ক্যামেরা
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এ ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ রয়েছে, 48MP চওড়া প্রাথমিক ক্যামেরার সাথে একটি 12MP আল্ট্রাওয়াইড ক্যামেরা এবং আরেকটি 12MP টেলিফটো লেন্স রয়েছে। নিঃসন্দেহে 48MP সেন্সর এই নতুন লেন্স এবং বড় সেন্সরগুলির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্যামেরা।
এটি মুলত অ্যাপলের প্রথম পিক্সেল-বিনিং সেন্সর, যার অর্থ এটি একটি বড় পিক্সেলে চারটি ছোট পিক্সেলকে সম্পুর্নভাবে একত্রিত করে 12MP ছবি ক্যাপচার করে। আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এ মাল্টিমিডিয়া কে আরো আকর্ষণীয় করতে রঙের বিশ্বস্ততা এবং কম আলোর কর্মক্ষমতা উন্নত করা হয়েছে।
ইমার্জেন্সি স্যাটেলাইট সংযোগ
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স জরুরি সহায়তা প্রদানের জন্য অ্যাপল গ্লোবালস্টারের লো-আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট এর সাথে সহযোগিতা করে। আপনি যদি কোথাও সেল সংযোগ ছাড়া আটকা পড়েন, তাহলে আপনার আইফোনকে কাছাকাছি কোনো স্যাটেলাইটের দিকে নিয়ে গিয়ে সহায়তা চাইতে পারবেন।
বিভিন্ন প্রশ্ন ও দিকনির্দেশনার দ্বারা অ্যাপেলের রিলে-কেন্দ্রে পাঠানোর মাধ্যমে জরুরি পরিষেবাগুলির সাথে যোগাযোগ করে। তবে এই বৈশিষ্ট্যটি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় কার্যকর করা হয়েছে, এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যা কি না সব দেশের ক্ষেত্রে সচল করা উচিত।
দাম ও অন্যান্য
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এর দাম মুলত এর বেস স্টোরেজ এর উপর ডিপেন্ড করে নির্ধারিত হয়ে থাকে। বেস স্টোরেজ এর চারটি ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে – 128GB, 256GB, 512GB এবং 1TB।
বেস স্টোরেজ 128GB ভেরিয়েন্টের দাম ২,০১,৫৯৯ টাকা, 256GB স্টোরেজ ভেরিয়েন্টের দাম ২,১৯,৬৯৯ টাকা, 512GB ভেরিয়েন্টের দাম ২,৫৫,৮৯৯ টাকা এবং 1TB ভেরিয়েন্টের দাম ২,৮৯,৯৯৯ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স ৯ সেপ্টেম্বর থেকে প্রি-অর্ডার এর জন্য পেশ করা হয় এবং সেল শুরু হয় ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইউএস এর পাশাপাশি এটি আরো ৩০টি দেশে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে সেল শুরু করা হয়।
0 Comments